নীহারিকা কী? অন্যান্য শ্রেণীর জ্যোতিষ্ক থেকে এদের পার্থক্য কোথায়?
উত্তরঃ নীহারিকা মহাকাশে অবস্থিত বিরাট বিরাট গ্যাসপিন্ড । এদের মধ্যে কিছু কিছু কঠিন বস্তুকণাও বিধৃত থাকতে পারে। এদের আকার-আকৃতিতে সর্বপ্রকার বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। নিজস্ব আকার-আকৃতি অনুযায়ী নীহারিকারা পৃথক পৃথক নাম পেয়ে থাকে, যেমন, 'কালপুরুষের বৃহৎ নীহারিকা" ইংরেজিতে Great Nebula in Orion, "উত্তর আমেরিকা নীহারিকা" ইংরেজিতে North Amnerica Nebula, "কর্কট নীহারিকা" ইংরেজিতে Crab Nebula। তা ছাড়া, সাধারণ লক্ষণের বিচারে নীহারিকারা হতে পারে 'উজ্জ্বল" (Bright) আর 'কৃষ্ণবর্ণ' (Dark)। গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু এবং উল্কা থেকে নীহারিকাদের এক বড় পার্থক্য ওদের গঠনে। কারণ গ্রহ, উপগ্রহ প্রভূতি মুখ্যত কঠিন পদার্থে গঠিত। আবার গ্রহ, উপগ্রহ প্রভৃতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোলাকৃতি নাকি প্রায় গোলাকৃতি। কিন্তু নীহারিকাদের সম্পর্কে সে-কথা আদৌী খাটে না। গ্রহ, উপগ্রহ প্রভৃতি সৌরজগতের অন্তর্ভুক্ত। এদের অবস্থান সুর্যের ধারে-কাছে এবং গতিবিধি প্রধানত সূর্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নীহারিকারা কিন্তু সব সূর্য থেকে অনেক অনেক দূরে আছে। ওদের আচার-আচরণে সূর্য প্রায় কোনো ছায়াপাতই করতে পারে না। ধূমকেতুরা যখন সূর্যের কাছে আসে তখন ওরা মুখ্যত গ্যাসপিণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তখনই ধূমকেতুর মস্তকে কিছু কিছু ছোট-বড় কঠিন বস্তুখণ্ড থেকে যায়। আর সূর্য থেকে দূরে সরে গেলে ধূমকেতুর গ্যাসীয় অংশ বরফের মত কঠিনাবস্থা ফিরে পায় এবং কঠিনরূপেই স্থিত বস্তুখন্ডগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক বৃহত্তর গোলাকৃতি কঠিন বস্তু সমবায় গড়ে তােলে। অল্প কালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এমন অবস্থান্তর বা রূপান্তর নীহারিকাদের ক্ষেত্রে ঘটে বা না-ঘটার কারণও অনুপস্থিত। আবার ধুমকেতুরা অন্ততপক্ষে দৃষ্ট ধুমকেতুরা সৌরজগতের সদস্য। অতএব ধুমকেতুদের সঙ্গে নীহারিকাদের সাথে আরও এক পার্থক্য থেকে যায়। তারাদের সঙ্গে নীহারিকারদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ বৈসাদৃশ্য আছে। তারারা গােলাকৃতি কিন্তু নীহারিকাদের আকৃতির কোনো স্থিরতা নেই। তারারও গ্যাসপিণ্ড কিন্তু তারারা সাধারণত অত্যুত্তপ, অনেক বেশি ভরবিশিষ্ট এবং ঘনত্বসম্পন্ন। সেই তুলনায় নীহারিকাদের তাপমাত্রা, ভর এবং ঘনত্ব অনেক কম। সবচেয় বড় কথা তারারা সংযোজন প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেদের দেহের অভ্যন্তরে প্রচন্ড শক্তি উৎপন্ন করে। যা তাপ, আলো প্রভৃতি রপে দিগবিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নীহারিকারা তা পারে না। নীহারিকারা অনুজ্জ্বল হতে পারে, উজ্জ্বলও হতে পারে; অনুত্তপ্ত হতে পারে, উত্তপ্তও হতে পারে। কিন্তু নীহারিকার উত্তাপ বা উজ্জ্বলতার কারণ তার নিজস্ব দেহ-উদ্ভূত শক্তি নয়। আশপাশে অবস্থিত তারাদের আলাে, তাপ প্রভৃতি বিকিরণের মাধ্যমে লাভ করে নীহারিকারা কিছুটা উজ্জ্বল বা উত্তপ্ত হয়। কখনো কখনো নিকটবর্তী তারার আলোয় নীহারিকার দেহে প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও মুল শক্তির উৎস তাে নীহারিকার নিজস্ব নয় তা হলো নিকটবর্তী তারার।
লেখকঃ এইচ এম হাছনাইন
শিক্ষার্থীঃ নাজিউর রহমানকলেজ, ভোলা।
বিভাগঃ বিজ্ঞান
0 coment rios: