তজুমদ্দিন হাসপাতালে জনবল সঙ্কট ও ডাক্তারদের খামখেয়ালিতে নাজুক চিকিৎসা ব্যবস্থা
এইচ এম হাছনাইন, তজুমদ্দিন, ভোলা প্রতিনিধি
ভােলার তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা মারাত্মাকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকট ও ডাক্তারদের খামখেয়ালিতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রােগীরা। উপজেলাসহ মেঘনার বুকে জেগে উঠা চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা তজুমদ্দিন হাসপাতাল। কিন্তু সেই চিকিৎসাসেবার ভরসার জায়গায় নেই চিকিৎসাসেবা নিয়ে কোনো জনপ্রতিনিধির তদারকি। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো চিকিৎসা। কিন্তু তা দিতে অবহেলায় ও খামখেয়ালিতে ভরপুর তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শাহনাজ শারমীন
জরুরি বিভাগের রুমে বসে আউটডােরের রোগী দেখছেন।
সেখানে দেখা যায় রােগীদের লম্বা লাইন লেগে রয়েছে। রোগীদের দাবী তজুমদ্দিন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বর্তমানে একেবারেই নাজুক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুরু থেকেই ৫০ শয্যা দিয়ে শুরু হলেও তখন থেকে জনবল সংকট লেগেই আছে। কয়েক বছর পূর্বে দুই তলা বিশিষ্ট নতুন ভবণ তৈরি করা হলেও জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজেট না থাকার কারণে নতুন ভবণের শয্যায় কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। কিন্তু নিচ তলায় ডাক্তারদের চেম্বার ও ফার্মেসি বিভাগ দিয়ে সেগুলোর কার্যক্রম চলছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং আবাসিক চিকিৎসকসহ ১৫টি পদের মধ্যে ৮টি শূন্য।নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ১১৬টি পদের মধ্যে ৫৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
কেউ সামান্য সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এলেও ডাক্তাররা ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার করেন । আর জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করে অনেক গরীব ও অসহায় রোগীর পক্ষে চিকিৎসা করানাে প্রায় অসম্ভব।
তজুমদ্দিন হাসপাতালে ওষুধের বিশাল তালিকা টানানো থাকলেও অধিকাংশ ওষুধই তজুমদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সরবারহে থাকে না। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনার জন্য ডাক্তাররা একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন। এ যেন গরিব ও অসহায় রােগীদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা'র মতাে।
তজুমদ্দিন হাসপাতালে মাত্র দুজন ডাক্তার দিয়ে ইনডোর, আউটডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা চলছে। আর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা নেন। আর লাইনে দাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বয়স্ক রোগী, শিশু ও নারীরা।
তজুমদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একজন নারী বলেন, আমার একমাসের বাচ্চা অসুস্থ। আউটডোরে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কখন ডাক্তার দেখাতে পারব তাও বলতে পারি না।
চাঁদপুর ইউনিয়ানের বাসিন্দা ও চাঁদপুর নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, আমার বাচ্চাকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে সেই ডাক্তার তিনটি টেস্ট দেন।হাসপাতালের ল্যাবে টেস্ট করাতে গেলে গিয়ে দেখি ল্যাব ট্যাকনিশিয়ান সারা দিনই অনুপস্থিত ছিলেন। তবে উত্তম কুমার নামে একজন ব্রাক এনজিও এর কর্মীকে দিয়ে টেস্ট করানোে হয়।
উত্তম কুমার তাকে জানান, কাগজ না থাকায় আপনি রিপোর্ট মোবাইলে ছবি তুলে নেন। তিনি আরাে জানান, টেস্টের ফি নিলেও কোনাে রশিদ সরবরাহ করা হয়নি।
তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মর্তুজার কাছে হাসপাতালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবো না।
পরে সাংবাদিক পরিচয়ে হাসপাতালে থাকা ডাক্তার শাহনাজ শারমীন এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে ও অফিসের কথা কৌশলে সব বিষয় এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এইসকল বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের ওয়েবসাইটে কোনো প্রকার আপডেট নেই। যেমনঃ ডাক্তার হাসপাতাল থেকে কে বিদায় নিয়ে কে যোগদান করেছেন। কোন কোন ওষুধ কোন কোন দিন হাসপাতালে থাকবে না। এইরকম আরো অনেক বিষয়।
তাই এইসব থেকে তজুমদ্দিন উপজেলাবাসী মুক্তি চেয়ে তারা দাবী করেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতালে জনবল সংকট নিরসন, নতুন ভবণে কার্যক্রম শুরু, সকল ল্যাব সঠিকভাবে চালু এবং ডাক্তারদের খামখেয়ালি বন্ধ ও করতে হবে। তা না হলে তজুমদ্দিন উপজেলাবাসী সঠিক চিকিৎসাসেবার কারণে মৃত্যুর দিকে পতিত হবেন।
0 coment rios: